মহিলারা মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে? এবং মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার বিধান কি?

 

মহিলারা মসজিদে নামাজ পড়তে পারবে?

সম্প্রতি মহিলাদের জুমু'আ, তারাবীহ ও ওয়াক্তিয়া নামাযের জামা'আতে উপস্থিতির তোড়জোর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। মসজিদ কমিটি মহিলাদের জামা'আতে শামিল হওয়ার ব্যবস্থাপনা করছেন। এর পিছনে কিছু প্রাপ্ত যুক্তি এবং বিভ্রান্ত মানুষের অবান্তর চিন্তা কাজ করছে।


তারা যুক্তি দেন- রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মহিলাগণ ওয়াক্তিয়া নামাযের জামা'আতসহ জুমু'আ ও ঈদের জামা'আতে শরীক হতেন। তাই আজ কেন মহিলারা জামা'আতে শরীক হতে পারবেন না। সুতরাং পুরুষগণ যেভাবে জামা'আতে শরীক হয়ে অধিক ছাওয়াব হাসিল করেন, তেমনি মহিলাগণও জামা'আতে শরীক হয়ে অধিক ছাওয়াব হাসিল করতে প্রয়াস পাবেন।


তারা আরো যুক্তি দেখান যে, আমরা যখন হজ্ব কিংবা উমরা পালন করতে পবিত্র মক্কা- মদীনায় গমন করি, সেখানে দেখি, পবিত্র হারাম শরীফ ও মসজিদে নববীতে মহিলাগণ জামা'আতে শরীক হন। তাহলে আমাদের দেশে কেন তারা তা পারবেন না?


ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূলুল্লাহ (সা.)। মহিলাগণকে জামা'আতে শরীক হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, তা মূলত শর্তসাপেক্ষে ছিল। তারা সাজগোজ করে বের হতেন না। সেখানে বর্তমান যুগের ন্যায় নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও ফিতনা-ফাসাদ ছিলো না। আর মহিলাগণ পরিপূর্ণভাবে পর্দায় চেহারাসহ সর্বাঙ্গ ঢেকে পুরুষদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক থাকতেন। আর তারা নতুন মুসলমান সেহেতু দ্বীন শিক্ষার জন্য এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা জেনে তা নিজে আমল করা ও অপরের নিকট প্রচার করার তাকীদ ছিলো।


মহিলাদের মসজিদের জামা'আতে যাওয়ার অনুমতি প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- “ তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে মসজিদসমূহে নিষেধ করো না।" (সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ১২০/ আৰু দাউদ, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৮৪)।


তবে এমতাবস্থায়ও মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে নিজ ঘরে নামায পড়া অধিক উত্তম বলে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে সহীহ সনদে বর্ণিত অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- তোমরা তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদসমূহে নিষেধ করো না, তবে তাদের জন্য নিজ ঘরে নামাজ পড়াই অধিক উত্তম। " (আবু দাউদ, ১ম খ, পৃষ্ঠা নং ৮৪/মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৫৪৭১)


অধিকন্ত পরবর্তীতে বিভিন্ন ফিতনা- ফাসাদের আশঙ্কা থাকার দরুণ মহিলাদের জন্য মসজিদে না যাওয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে। হযরত আয়িশা (রা.) এ ব্যাপারে কড়া ভাষায় বলেন- “রাসুলুল্লাহ (সা.) যদি দেখতেন আজ মহিলারা যা করছে, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন যেমনভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।" (সহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১২০/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৪৫। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২৫৯৮২)


এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজর আসক্বালানী (রহ.) বলেন- “রাসূলুল্লাহ (সা.) যদি আজকের মহিলাদের দেখতেন, তাদেরকে ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করতেন বা তা হারাম করে দিতেন।" (তুহফাহ, ১২ খণ্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা)


তেমনি হযরত উমর (রা.) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) প্রমুখ সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এবং তৎপরবর্তী হযরত উরওয়া, কাসিম, নাখয়ী, হাসান বসরী, আতা (রহ.) প্রমুখ তাবিয়ী ফক্বীহগণ মহিলাদের মসজিদে না যাওয়ার ব্যাপারে মত প্রকাশ করেন। (মাজাল্লাতুল বুহুসিল ইসলামিয়্যা, ৮০ খণ্ড, ৩১৯ পৃষ্ঠা)


সেই ভিত্তিতে এ হুকুম ব্যাখ্যা করে ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা আইনী বলেন- "মহিলাদের জামা'আতে উপস্থিতির বিধানটি ছিলো রাসূলুল্লাহ (সা.)কে উপলক্ষে করে, এছাড়াও তখন মহিলাদের আসা-যাওয়াও চলাফেরায় পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা ছিলো, এখন যেহেতু উল্লিখিত কারণগুলো অনুপস্থিত, তাই তাদের জন্য জামা আতে শরীক হওয়ার অনুমতি নেই।” (উমদাতুল কারী, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৬৪৬)


তাই বর্তমানে মহিলাদের মসজিদের জামা'আতে উপস্থিত হওয়ার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। বিশেষ করে তারাতো মসজিদে যাবেন অধিক ফজীলত লাভের জন্য অথচ তাদের ক্ষেত্রে ঘরে নামার পড়া মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে বেশী ফজীলতপূর্ণ বলে পূর্বোক্ত হাদীসে বলা হয়েছে। তেমনি এ ব্যাপারটি আরো স্পষ্টরূপে হযরত উম্মে হুমাইদ (রা.)-এর নিম্নোক্ত হাদীসে রয়েছে- হযরত উম্মে হুমাইদ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট এলেন, অতঃপর বললেন- 'হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে নামাজ পড়া পছন্দ করি ।” তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'আমি জানি, তুমি আমার সাথে নামায পড়া পছন্দ কর, আর তোমার গৃহাভ্যন্তরের নিভৃত কক্ষে নামায পড়া তোমার গৃহে নামায পড়া থেকে উত্তম এবং তোমার গৃহে নামায় পড়া তোমার বাড়ীতে নামায পড়া থেকে উত্তম, আর তোমার বাড়ীতে নামায পড়া তোমার মহল্লার মসজিদে নামা পড়া থেকে উত্তম এবং তোমার মহল্লার মসজিদে নামায পড়া আমার মসজিদে নামায পড়া থেকে উত্তম। বর্ণনাকারী বলেন, তখন হযরত উম্মে হুমাইদ (রা.) নির্দেশ দিলেন, সেই অনুযায়ী তার ঘরের সর্বপ্রান্তের অংশে এবং সর্বনিঝুম গহীনে তার নামাযের স্থান বানাে হয়। অতঃপর তিনি সেই স্থানে নামাজ পড়তে থাকেন সে অবধি যে, তিনি মহান আল্লাহর সাথে মুলাকাত করেন (ওফাত বরণ করেন) (মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৬৫৫০/ সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১৬৮৯, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ২৬২৩)


সুতরাং বুঝা গেলো-মহিলাদের অধিক ফজীলতের জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরের গহীন অন্দরে নামাজ পড়াই কর্তব্য, এতেই তাদের জন্য অধিক ছাওয়াব রয়েছে।


তেমনি হুকুম হজ্বের ক্ষেত্রেও। হজ্বের সময় মহিলাদের মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায়ের চেয়ে নিজ আবাসস্থলে বা তাঁবুতে নামাজ পড়া অধিক ছাওয়াবের বিষয়। তাই তারা বাইতুল্লাহতে শুধু তাওয়াফের জন্য যাবেন, কিন্তু নামাজ তারা সেখানে না পড়ে অধিক ছাওয়াবের জন্য নিজ তাবুতে বা আবাসস্থলে এসে পড়বেন। (আহসানুল ফাতাওয়া, ৪র্থ খন্ড , পৃষ্ঠা নং ৪৫৬)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url