একই পশুতে আকিকা ও কুরবানি করার বিধান

 

কোরবানি ও আকিকা

আকিকা ও কুরবানী দু'টি স্বতন্ত্ৰ ইবাদাত। তাই কুরবানি ও আকিকা আলাদাভাবেই আদায় করা উচিত। তবে একই পশুতে একত্রে আদায় করলে আদায় হবে না, তা নয়। একত্রে করলেও কুরবানি আকিকা দু'টোই আদায় হবে। কারণ আকিকাও এক ধরনের কুরবানি। নিচে তার কয়েকটি দিক তুলে ধরা হল।

হাদিসে নববিতে কুরবানির মতো আকিকার উপরও 'নুসুক' শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর 'নুসুক' অর্থ কুরবানি।


سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ العَقِيقَةِ فَقال لا يُحِبُّ الله عزوجل العفوق وكأنه كره الاسم قال لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّمَا نَسْأَلُك أَحدُنَا يُولد له قال من أحب أن يلسك عَنْ وَلَدِهِ فَلْيَأْسُكَ عَنْهُ مَنْ الغلام شانان مكافأتان وعن الجارية شاء


অর্থ : নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আকিকা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আল্লাহ তা'আলা মাতাপিতার অবাধ্যতাকে পছন্দ করেন না। যেন তিনি এই (আকিকা) নামকে অপছন্দ করলেন। ঐ ব্যক্তি আরয করল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করছি, কারও সন্তান হলে সন্তানের পক্ষ হতে যা যবেহ করা হয় সেই বিষয়ে। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি স্বীয় সন্তানের পক্ষ হতে যবেহ করতে ইচ্ছে করে, সে যেন ছেলে সন্তানের পক্ষ হতে একই ধরনের দু'টি বকরি যবেহ করে এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ হতে একটি বকরি যবেহ করে। [সুনানে নাসায়ি: হাদিস ৪২১৩, মুসনাদে আহমদ : হাদিস ৬৭১৩]

উপরোক্ত হাদিসে রাসুল স. আকিকার শব্দের পরিবর্তে “নুসুক” শব্দ তথা কুরবানির অর্থে ব্যবহৃত শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আকিকা ও কুরবানি একই ধরনের ইবাদাত।

কুরবানির পশুর ক্ষেত্রে যেমন নির্দিষ্ট বয়স, সুস্থতা ইত্যাদি জরুরি বিষয়, একইভাবে আকিকার ক্ষেত্রেও এ বিষয়গুলো জরুরি বিষয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকেও বুঝা যায় আকিকা ও কুরবানি একই ধরনের ইবাদাত। যেমন ইমাম তিরমিযি রহ. একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-

قال أهل العلم لا يُخرى في العقيقة من الشاةِ إِلَّا مَا يُجْزِى فِي الأَضْحِيَّةِ

অর্থ : যে ধরনের বকরি কুরবানির জন্য বৈধ সেই ধরনের বকরি আকিকার জন্যও বৈধ [তিরমিয়ি : ১৫২২]

সাহাবি ও তাবেয়িগণ যারা নববি আদর্শের উত্তম দৃষ্টান্ত ছিলেন, তাদের অভিমত হলো শিশুর পক্ষ থেকে কুরবানি করলে তা আকিকা হিসেবে আদায় হবে। যেমন প্রখ্যাত তাবেয়ি হাসান বসরি রহ. বলেন-

إذا وا من العلام فقد أجزات عنه من العقيقة

অর্থ : যদি শিশুর পক্ষ থেকে (কুরবানির দিন) কুরবানি করা হয় তাহলে উক্ত কুরবানি শিশুর আকিকার জন্যও যথেষ্ট হবে। (অর্থাৎ এর দ্বারা আকিকাও আদায় হয়ে যাবে)। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৫/৫৩৪]


সারকথা :

• 'নুসুক' বা কুরবানির ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার ক্ষেত্রে একটি ‘জবাই” দ্বারা একটি কুরবানি আদায় হলেও উট-গরুর ক্ষেত্রে একটি 'জবাই' দ্বারা সাতটি কুরবানি আদায় হতে পারে। আকিকাও যেহেতু 'নুসুক' বা কুরবানি তাই এ মূলনীতিতে আকীকাও শামিল থাকবে। সুতরাং 'একটি পশু জবাই করা দ্বারা যেমন তা আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে কোনো পশু জবাইয়ে শরীক হওয়ার' দ্বারাও তা আদায় হয়ে যাবে।

yle="font-family: Tiro Bangla; font-size: large;">• দুই ধরনের কুরবানি এক পশু দ্বারা আদায় হওয়ার বিষয়টি একটি ইজতিহাদী বিষয়। এ কারণে মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে এ বিষয়ে কিছু মতপার্থক্যও আছে। কিন্তু নস বা কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট কোনো বিধানে এ বিষয়ে নিষেধ আছে বলে আমাদের জানা নেই; বরং অনুমোদনের পক্ষে হাদিস-আছারের দলীল আছে। বিখ্যাত তাবেয়ী 'আতা ইবনে আবী রাবাহ রাহ. এর ফতোয়াটিই সম্ভবত এ বিষয়ে যথেষ্ট হবে। তিনি বলেন- "উট ও গরু সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানি হতে পারে। আর এতে শরীক হতে পারে কুরবানিকারী, তামাত্তু হজকারী এবং হজের ইহরাম গ্রহণের পর হজ আদায়ে অপারগ ব্যক্তি । [সুনানে সায়ীদ ইবনে মানসূর : পৃষ্ঠা ৫৭৩]

লক্ষণীয় যে, তাবেয়িগণের যুগেই একটি পশু দ্বারা তিন ধরনের কুরবানি আদায় হওয়ার ফতোয়া কত স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url