ঈদের দিন জুমার নামাজ পড়ার বিধান

 

ঈদের দিন জুম'আর বিধান

জুমআর দিনে ঈদ হলে, ঈদের নামায ও জুমআর নামায উভয়টিই পড়তে হবে। ঈদের নামায পড়লে জুমআ পড়া লাগবে না- এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা, ঈদের নামায় ও জুমআর নামায দুটি পৃথক পৃথক আমল। অন্যদিকে ঈদের নামায ওয়াজিব আর জুমআর নামায ফরয। সুতরাং একটি আদায় করে আরেকটি বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর সপক্ষে সহীহ হাদিসে অনেক সুস্পষ্ট প্রমাণও রয়েছে। জুমআর দিন ঈদ হলে নবিজি স. উভয় নামাযই পড়তেন। এক্ষেত্রে নবিজি স. থেকে জুমআর নামায না পড়ার কোনো প্রমাণ নেই।

হযরত নুমান ইবনে বাশীর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْرَأُ فِي الْعِيدَيْنِ وَفِي الْجُمُعَةِ بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى وَهَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ الْغَاشِيَةِ، قَالَ : وَإِذَا اجْتَمَعَ الْعِيْدُ وَالْجُمْعَةُ فِي يَوْمٍ وَاحِدٍ ، يَقْرَأْ بِهِمَا أَيْضًا فِي الصَّلاتَيْنِ.

অর্থ : রাসুল স. দুই ঈদের নামাযে এবং জুমআর নামাযে সুরা আ'লা ও সুরা গাশিয়া পড়তেন। যখন একই দিনে জুমআ ও ঈদ হতো, তিনি উভয় নামাযেই এই সুরা দুটি পড়তেন। [সহীহ মুসলিম: হাদীস ৮৭৮]


তাবেয়ি আবু উবাইদ রাহ. বলেন-

شهدتُ العِيْدَ مَعَ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ فَكَانَ ذَلِكَ يَوْمَ الجُمُعَةِ فَصَلَّى قَبْلَ الخُطْبَةِ ثُمَّ خَطَبَ فَقَالَ : يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ هَذَا يَوْمٌ قَدِ اجْتَمَعَ لَكُمْ فِيهِ عِيْدَانِ فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَنْتَظِرَ الجُمُعَةَ مِنْ أَهْلِ العَوَالِي فَلْيَنْتَظِرُ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَقَدْ أَذِنْتُ لَهُ.

অর্থ : হযরত উসমান রা.-এর খেলাফতকালে আমি ঈদের নামাযে উপস্থিত হলাম। সে দিন ছিল জুমআর দিন। তিনি ঈদের নামায পড়ালেন। তারপর খুতবায় বললেন, হে লোক সকল! এটি এমন একটি দিন, যেই দিনে দুই ঈদ একত্রিত হয়ে গেছে। সুতরাং আওয়ালী (মদিনার বাইরের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে জুমআর বিধান নেই।) এলাকা থেকে আগত লোকদের কেউ চাইলে জুমআর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। আর কেউ (নিজ এলাকায়) ফিরে যেতে চাইলে আমি তাকে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলাম। [সহীহ বুখারি : ৫৫৭২]


উমর ইবনে আব্দুল আযীয় রাহ. বলেন-

اجْتَمَعَ عِيْدَانِ عَلَى عَهْدِ النّبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : مَنْ أَحَبُّ أَنْ يَجْلِسَ مِنْ أَهْلِ الْعَالِيَةِ فَلْيَجْلِسَ فِي غَيْرِ حَرَجٍ

অর্থ : নবিজির যুগে একবার একই দিনে জুমআ ও ঈদ হয়। তখন রাসুল স. ইরশাদ করেন, আওয়ালী (মদীনার বাইরের এমন প্রত্যন্ত অঞ্চল যেখানে জুমআর বিধান নেই।) এলাকা থেকে আগত লোকদের কেউ চাইলে জুমআর জন্য অপেক্ষা করতে পারে, যদি তার কোনো কষ্ট না হয়। [মুসনাদুশ শাফিয়ী: ৫০০]

এই বর্ণনাগুলোতে স্পষ্টভাবেই উল্লেখ হয়েছে, জুমআর নামাযে হাজির না হওয়ার সুযোগ কেবলই মদিনার বাহির থেকে আগত ঐ লোকদের জন্য, যাদের উপর গ্রামের অধিবাসী হওয়ায় জুমআ ফরযই নয়।

লক্ষণীয় যে, যারা বলেন, ‘জুমআর দিন ঈদ হলে ঈদের নামায পড়লে জুমআর নামায না পড়লে কোনো অসু নেই' তারা যেসব হাদিসের আলোকে কথাটি বলে থাকেন সেগুলোর সনদ যয়ীফ (দুর্বল)। এ ধরনের যয়ীফ হাদিস দ্বারা জুমআর মতো ফরয বিধান বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।

যেমন নিম্নোক্ত হাদিসটি -

عَنْ إِيَاسِ بْنِ أَبِي رَمْلَةَ الشَّامِيَ قَالَ: شَهِدْتُ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِي سُفْيَانَ وَهُوَ يَسْأَلْ زَيْدَ بْنَ أَرْقَمَ قَالَ : أَشَهِدْتَ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِيدَيْنِ اجْتَمَعَا فِي يَوْمِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَكَيْفَ صَنَعَ ؟ قَالَ: صَلَى الْعِيدَ ، ثُمّ رَخَّصَ فِي الْجُمُعَةِ فَقَالَ: مَنْ شَاءَ أَنْ يُصَلِّيَ فَلْيُصَلِّ.

অর্থ : নবিজি স. এর সময়ে একবার জুমআর দিন ঈদ হয়। তখন নবিজি স. ঈদের নামায পড়েন এবং জুমআর নামাযের ব্যাপারে ছাড় দিয়ে বলেন, যে জুমআর নামায পড়তে চায় সে পড়তে পারে। [সুনানে আবু দাউদ : হাদীস ১০৭০]


হাদিসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের পর্যালোচনা :

 এই হাদিসের সনদে ইয়াস ইবনে আবী রামলা নামে একজন রাবী আছেন। তাকে ইবনুল মুনযির ও হাফেয ইবনে হাজার রাহ. ‘মাজহূল' (অর্থাৎ যার পরিচয় অজানা। তাই তার বিশ্বস্ততাও প্রমাণিত নয়) বলেছেন।

 ইমাম ইবনে খুযাইমা রাহ. বলেন, 'আমি ইয়াস ইবনে আবী রামলার ব্যাপারে ভালো-মন্দ কিছুই জানি না। [মীযানুল ইতিদাল ১/২৬৮, তাকরীবুত তাহযীব : পৃষ্ঠা ১৫৫, সহীহ ইবনে খুযাইমা ১/৭০৯]

• সনদে মাজহূল বর্ণনাকারী থাকায় এই হাদিসকে সহীহ বলার সুযোগ নেই । এমর্মে ইমাম ইবনুল মুনযির রাহ বলেন- হাদিসটি প্রমাণিত নয়।' [আত তালখীসুল হাবীর ২/২১০]


হাদিসটির ব্যাপারে ভিন্ন একটি পর্যালোচনা :

এ বিষয়ে দুর্বল সনদে আরো দুটি বর্ণনা থাকায় কেউ কেউ হাদিসটিকে সামষ্টিক বিচারে গ্রহণযোগ্য বলতে চেয়েছেন। কিন্তু হাদিসটি গ্রহণযোগ্য ধরে নেওয়া হলেও তা দ্বারা সাধারণভাবে সকল মানুষের জন্য জুমআ না পড়ার এখতিয়ার প্রমাণিত হয় না; বরং এ ধরনের হাদিস ও আসারে ঐসব মানুষের জন্য জুমআর ছাড় দেওয়া হয়েছে, যারা ঈদের নামায পড়ার জন্য এমন এলাকা থেকে এসেছে যেখানের লোকদের উপর জুমআ পূর্ব থেকেই ফরয নয়। সহীহ বুখারির পুর্বোক্ত বর্ণনাটিসহ বিভিন্ন হাদিসই যার সুস্পষ্ট প্রমাণ।

সুতরাং জুমআর দিনে ঈদ হলেও শহরবাসীর জন্য জুমআর নামায আদায় ঐচ্ছিক হবে না; বরং ঈদ ও জুমআর নামায উভয়টিই গুরুত্বের সাথে আদায় করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url