ব্রেস্ট টিউমার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ এবং করণীয়

 

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার

কথায় বলে, শিশুর হাসি মায়ের খুশী। শিশুদের সুস্থতার লক্ষণ সবসময় হাসি-খুশি থাকা। আর এই সুন্দর হাসিটির কারণে যখন শিশুর ঝকঝকে ছোট ছোট একরাশ দাঁত দেখা যায়, তখন সবার চোখকে শিশুর অনাবিল সৌন্দর্যভরা মুখখানি মুগ্ধ করে।

শিশুর এ নির্মম হাসির জন্য তার সুস্থতা নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর নবজাতক শিশুর সুস্থতা অনেকাংশেই নির্ভর করে মায়ের সুস্থতার উপর। বিশেষ করে শিশুর শরীরের যথাযথ পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই। কিন্তু যদি মায়ের নিকট প্রদত্ত শিশুর জন্য মহান আল্লাহর সেই মহাদান কোনভাবে বাধাগ্রস্ত হয়, তখন শিশুর দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্তন ক্যান্সার।

সাম্প্রতিকালে সারা পৃথিবীর ন্যায় বাংলাদেশেও স্তন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যার ক্রমবর্ধমান লক্ষণীয়। ভারত উপমহাদেশে প্রতি বছর আশি হাজার থেকে এক লক্ষ মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করতে পারলে আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারকে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ আয়ত্বের মধ্যে আনা যায়।

সাধারণত এ রোগ চল্লিশোর্ধের মহিলাদের বেশী দেখা যায়। নিঃসন্তান মহিলা বা যে মহিলারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না বা খাওয়াতে অক্ষম, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণের তুলনায় অনেক বেশী।

এ কথা বাস্তব চিত্রে ওঠে এসেছে যে, ব্রেষ্ট ক্যান্সারের একটা জেনেটিক (Genetic) প্রক্রিয়া আছে। পরিবারের কোন মহিলা এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর অন্যান্যদের এতে আক্রান্ত। মাত্রা ২২%-৩৩% পর্যন্ত দেখা যায়।

এখনও পর্যন্ত ৮টি ব্রেষ্ট ক্যান্সার জিন (Gene) আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে BRCA-1 & | BRCA-2 বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

লক্ষণ : স্তন ক্যান্সারের রোগী সাধারণত বুকে চাকা অথবা গাঁট (Lump) অনুভব করেন। অনেক ক্ষেত্রে নিপল থেকে লাল রঙের রস অথবা রক্ত জাতীয় পদার্থ বাহির হয়। এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন অনেকে। আবার যারা এই উপসর্গগুলো উপেক্ষা করেন কিংবা ভয়ে বা লজ্জায় চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না, তাদের ক্ষেত্রে বগলের তলায় ঢাকা অথবা স্তনের ওপর চামড়ায় কোঁচকানো লক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে বুঝে নিতে হয় যে, রোগটা অনেক দূর এগিয়েছে।

একথা অনস্বীকার্য যে, এ রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ৮০%-৮৫% রোগীকে চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য করা সম্ভব। আর প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ার জন্যে রোগীকে নিজের শরীর নিজেকেই পরীক্ষা করে দেখতে হবে। একমাত্র এই পদ্ধতিতেই দেখা গেছে যে, স্তনের ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে এবং রোগীর চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।

যাদের উপরোক্ত লক্ষণ দেখা যায় বিশেষতঃ চল্লিশোর্ধ মহিলা এবং যাদের পরিবারে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী আছেন তাঁদের উচিত নিয়মিত Mammogram করানো। যার ফলে ব্রেষ্টে গাট হওয়ার অনেক আগেই ক্যান্সার নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করানো যায়। এ সমস্ত ক্ষেত্রে চিকিৎসার ফলও অনেক ভাল হয়।

নিজেকে পরীক্ষা করার আগে যেটা মনে রাখতে হবে, তা হলো- ঋতুচক্রের বিভিন্ন সময়ে স্তনের গঠন ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যাদের ঋতুচক্র নিয়মিত হয়, তাদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের কয়েকদিন আগে বুকের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে বগলের কাছে সামান্য ফোলা ও ব্যথা অনুভব হয়।

কখন নিজেকে পরীক্ষা করবেন : মাসে একবার ঋতুস্রাবের এক সপ্তাহ পরে, সাধারণত গোসল করার সময় বা জামা-কাপড় পরার সময় এই পরীক্ষা করা যায়।

কিভাবে পরীক্ষা করবেন :

১। আয়নার সামনে দু'পাশে হাত রেখে দাঁড়ান। দু'দিকের স্তনের মধ্যে কোন অসামঞ্জস্য আছে কিনা লক্ষ্য করুন। এবার দু'হাত ওপরে তুলুন-মাথার পাশে রাখুন। দেখুন, দু'দিকে কোন অসামঞ্জস্য আছে কিনা?

২। হাতের চেটো দিয়ে প্রথমে একদিকের স্তন ও পরে অন্যদিকের স্তন পরীক্ষা করুন, কোন প্রকার চাকা বা ফোলা আছে কিনা লক্ষ্য করুন।

৩। এবার দেখুন, নিপল-এর কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা। যদি দেখা যায়, একটি নিপল ভেতরে দিকে ঢুকে যাচ্ছে অথবা যদি নিপল এর পাশে কোন ঘা লক্ষ্য করা যায়, তাহলে সত্বর চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। নিপল থেকে কোন প্রকার “ডিসচার্জ” লক্ষ্য করলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

যেহেতু সহজেই স্তনে চাকা অনুভব করা যায়, তাই শরীরের অন্যান্য অংশের ক্যান্সারের তুলনায় ব্রেষ্ট ক্যান্সারের চিকিৎসার ফল আশাপ্রদ। হোমিও প্যাথিক চিকিৎসায়ও ব্রেষ্ট টিউমার ও ব্রেষ্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা ফলপ্রসু। যদি লক্ষণ সাদৃশ্য সঠিক ঔষধ নির্বাচন করা হয়, তবে সহজে আরোগ্য লাভ সম্ভব। রোগীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, রোগের কারণ, দুঃখ-কষ্ট, মানসিক চাপ প্রভৃতি বিবেচনা করে ঔষধ দিলে আরোগ্য সহজতর হয়। হোমিও প্যাথিতে ব্রষ্ট ক্যান্সার ও ব্রেস্ট টিউমার চিকিৎসায় সাধারণত কনিয়াম, পাইটোলক্কা, সিপিয়া, পালস ইত্যাদি জাতীয় ঔষধ (রোগের ধরন অনুযায়ী) ব্যবহার করা হয়।

[লেখক : মহাসচিব, আইডিয়াল ডক্টর্স ফোরাম অব হোমিওপ্যাথি/ চেম্বার : অর্গানন হোমিও কমপ্লেক্স ১০৬/ক নয়া পল্টন (২য় তলা), বক্স কালভার্ট রোড, ঢাকা। মোবাইল: ০১১৯৫-৪৩৫৮৪৮, ০১৯১১-০২০৬৬৪]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url