আরাফার রোজা রাখার ফজিলত ও আরাফা কোন দিন?

 

আরাফার রোজার ফজিলত

ইয়াওমে আরাফার রোযা রাখার ফজিলত:

আবু কাতাদা রা. বর্ণনা করেছেন, ইয়াওমে আরাফার রোযার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে নবিজি স. বলেন-

صِيَامُ يَوْم عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ

অর্থ : ‘ইয়াওমে আরাফার রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। [সহীহ মুসলিম: হাদীস ১১৬২]


ইয়াওমে আরাফা কোন দিন?

"ইয়াওমে আরাফা' দ্বারা ০৯ যিলহজ অর্থাৎ ঈদের আগের দিন উদ্দেশ্য। আরও সহজে বলা যায়, ইয়াওমে আরাফা' হচ্ছে ০৯ যিলহজের পারিভাষিক নাম। হজের প্রধান রোকন 'আরাফায় অবস্থান' যেহেতু তারিখ হিসাবে ০৯ যিলহজে আদায় করা হয়, তাই এ তারিখের নাম হয়ে গেছে “ইয়াওমে আরাফাত”।

সুতরাং আমাদের দেশের চাঁদের হিসেবে যেদিন ০৯ যিলহজ হয় সেদিনই ইয়াওমে আরাফার রোযা রাখতে হবে; সৌদির হিসাবে আরাফার ময়দানে হাজীগণের অবস্থানের দিন অনুযায়ী নয়। কেননা এই রোযা আরাফার ময়দানের আমল নয়; বরং আরাফার দিন তো হাজীগণের জন্য রোযা না রাখাই মুস্তাহাব।


ইয়াওমে আরাফা নির্ধারণে দালিলিক আলোচনা :

০৯ যিলহজ-ই যে ইয়াওমে আরাফা তার একটি দৃষ্টান্ত 'তাকবীরে তাশরীক' সংক্রান্ত হাদিস। উক্ত সহীহ হাদিসটিতে 'ইয়াওমে আরাফা’ থেকে তাকবীরে তাশরীক শুরুর কথা এসেছে। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, তাকবীরে তাশরীকের আমলটি শুরু হয় যিলহজের ০৯ তারিখ অর্থাৎ ঈদের আগের দিন ফজর থেকে। এ সংক্রান্ত হাদিসটি নিম্নরূপ -

হযরত আলী রা. বলেন-

أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق

অর্থ : নবিজি স. ইয়াওমে আরাফা (০৯ যিলহজ) ফজরের পর থেকে ১৩ যিলহজ আসর পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৫৬৭৭]

গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর। এটি প্রমাণ করে, ‘ইয়াওমে আরাফা' একটি তারিখের নাম। আর তা হচ্ছে ০৯ যিলহজ্ব আর ‘ইয়াওমুন নাহর'ও একটি তারিখের নাম আর তা হচ্ছে ১০ যিলহজ।

সুতরাং কোনো অঞ্চলের অধিবাসীরা যদি ঐ অঞ্চলের তারিখ অনুযায়ী ইয়াওমুন নাহরের অর্থ ১০ যিলহজ ধরে আর সৌদির সাথে মিল রেখে ইয়াওমে আরাফার অর্থ করে ০৮ যিলহজ, তাহলে সেটা হবে এক উদ্ভট, হাস্যকর ও ইজমা বিরোধী কথা। কারণ ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমুন নাহরের মাঝে আরেকটি দিন স্বীকার করে নেওয়া ইজমার সরাসরি বিরোধী।


আরাফার ময়দানে হাজীগণের অবস্থানের দিনের সাথে মিল রেখে ইয়াওমে আরাফার রোযা রাখলে যেসব জটিলতা হতে পারে -

হাজীগণ যে সময়ে আরাফায় অবস্থান করবেন, সে সময় পৃথিবীর অনেক দেশে রাত থাকবে। সুতরাং সেসব দেশের মুসলমানগণ হাজী সাহেবদের সাথে কীভাবে সাদৃশ্যতা রাখবেন?

পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে আরবের এক দিন আগেও চাঁদ দেখা যায়। যেমন ২০২১ সালে সোমালিয়া, নাইজার ইত্যাদি দেশে শাওয়ালের চাঁদ আরবের ০১ দিন আগে দেখা গিয়েছিল। সে মোতাবেক হাজীগণ যে দিন আরাফায় অবস্থান করবেন, সে দিন ঐ সব দেশে ১০ যিলহজ তথা ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। সুতরাং আরবের সঙ্গে আরাফার রোযা রাখতে হলে তাদের ঈদের দিন রোযা রাখতে হবে। অথচ হাদিসে ঈদের দিন রোযা রাখাকে হারাম করা হয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url