পহেলা এপ্রিল রক্তঝরা এক করুণ ট্রাজেডি । এপ্রিল ফুলের ইসলামিক ইতিহাস

 

April Fools Day Islamic History

একজন সুস্থ জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি কখনো উদ্দেশ্যহীন কোন কাজ করতে পারে না। তার হাটা-চলা, উঠা-বসা, পড়া-লেখা, খাওয়া-পরা সব কাজেরই একটি উদ্দেশ্য থাকে। তাইতো বলা হয়—'অজানা যে হাটে, সে পাগল বটে।'

তারপরও আমি বলবো কোন পাগল অজানা হাটলেও তার মাঝে এতটুকু কান্ডজ্ঞান বাকী থাকে যার দরুণ সে ইচ্ছে করে আগুনে বা সাগরে ঝাঁপ দেয় না। তাকে আঘাত করলে সে কাঁদে বৈ হাসে না। এমনকি একটি অবুঝ শিশু বেলায়ও আমরা এ প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষ করি।

কিন্তু দুঃখজনক ও আশ্চর্যের বিষয় হলো, পাগল ও শিশু নয়- এমন অনেক আধুনিক জ্ঞানের অধিকারী মুসলিম বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিময় ডিজিটাল যুগেও আত্মভোলা হুজুগে আচরণ করে কখনো আগ-পাছ না ভেবেই। তারা আজ আত্মবিস্মৃত হয়ে আত্মোপহাসে নিমজ্জিত হয়ে আছে।

সেই আত্মোপহাসের বিষয় হলো, ১লা এপ্রিলের ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে এদিনকে এপ্রিল ফুল (April Fool) বা বোঝা বানানোর দিবস হিসেবে পালন করা। অথচ এর ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়- এদিন কুচক্রী খৃস্টানরা স্পেনের হাজার হাজার মুসলমানকে বোকা বানিয়ে ধোঁকা দিয়ে মসজিদ ও জাহাজে আশ্রয় নিতে বলে সেখানে আগুন লাগিয়ে এবং জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে পুড়িয়ে ও ডুবিয়ে মেরেছে। আর এর আনন্দ স্বরূপ তারা প্রতি বছর এদিনকে মুসলমানদেরকে বোকা বানানোর দিন রূপে এপ্রিল ফুল' নামে পালন করে

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অনেক আত্মভোলা মুসলমানও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে এদিনকে পালন করতে গিয়ে আত্মোপহাস করে। অথচ এদিনতো মুসলমানদের শোকের দিন এবং ধোঁকাবাজ খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশের দিবস হওয়াই যুক্তিযুক্ত ছিলো।

সেই ১লা এপ্রিলের কালো অধ্যায়ের কথা মুসলমানদের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এর রক্তাক্ত বীভৎস ক্ষত কখনো শুকাবার নয়।

আত্মবিস্তৃত মুসলিম যুবকদের উদ্দেশ্যে ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত ও রক্তাক্ত অধ্যায়ের সংক্ষিপ্তসার নিয়ে আলোকপাত করছি--

গোড়ার কথা তখন ছিল ৭১১ খৃস্টাব্দ। উমাইয়া শাসনামল। তৎকালীন আন্দালুসের (স্পেন) রাজা ছিলেন রডারিক। তার অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছিলো সর্বস্তরের মানুষ। তখন আফ্রিকার পশ্চিম রণক্ষেত্রের মুসলিম কমান্ডার ছিলেন মূসা বিন নুসায়ের। তিনি সাত হাজার সৈন্য সহ তারেক বিন যিয়াদকে পাঠালেন খৃষ্টান রাজা রডারিকের জুলুম- অত্যাচার থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য।

বীর সেনানী তারেক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে রডারিকের লক্ষাধিক সৈন্যকে পরাজিত করে মুসলিম মুজাহিদগণ স্পেন জয় করেন এবং সেখানকার মানুষকে রডারিকের জুলুম-অত্যাচার ও নিপীড়ন-নিষ্পেষণ থেকে মুক্ত করেন।

দীর্ঘ আটশত বছর দক্ষতা ও সফলতার সাথে স্পেন শাসন করেন তারা। এ সময় জ্ঞানে- বিজ্ঞানে অভূতপূর্ব কল্যাণ সাধিত হয় সেখানে। উন্নত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্রে পরিণত হয় স্পেন।

তখন ঈর্ষাকাতর খৃষ্টান জগৎ নানান কুটকৌশল ও ষড়যন্ত্রে মুসলমানদের মাঝে বিলাসিতার মরণফাঁদ পেতে দেয়। তাদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে আটকা পড়ে মুসলিম শাসকরা ইসলামের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও আদর্শকে ভুলে আয়েশী হয়ে যান। ফলে যা হবার তা-ই হয়। অর্থাৎ ৭১১ ইং থেকে ১৪৯২ ইং সনের মধ্যে মুসলমানদের মাঝে ভাঙন শুরু হয়।

তখন এ সুযোগ লুফে নেয় পর্তুগিজ রাণী ইসাবেলা। স্পেনের বুক থেকে চিরতরে মুসলিমজাতিকে উৎখাত করার লক্ষ্যে সে পার্শ্ববর্তী মুসলিমবিদ্বেষী সম্রাট ফার্ডিন্যান্ডকে বিয়ে করে। অন্যান্য খৃষ্টান রাজারাও যোগ দেয় তাদের সাথে। গঠিত হয় 'মুসলিমনিধন সম্মিলিত জোট'।

এপ্রিল ফুলের করুণ ইতিহাস

১৪৯২ খৃষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল। স্পেনের রাজধানী গ্রানাডায় খৃষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও পর্তুগিজ রানী ইসাবেলার বাহিনী আক্রমণ করলে, মুসলমানদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা সুবিধা করতে পারে না। তখন তারা মুসলমানদেরকে অবরোধ করে রাখে। পরিশেষে সমঝোতা হিসেবে মুসলমানদেরকে আত্মরক্ষার সুযোগ দেয়ার কথা বলে তারা ঘোষণা করে মুসলমানদের যারা অস্ত্র ত্যাগ করে মসজিদে আশ্রয় নিবে, তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে এবং যারা নৌ জাহাজে আশ্রয় নিবে, তাদেরকে অন্য মুসলিম দেশে চলে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। সরলপ্রাণ মুসলমানরা ধূর্ত ফার্ডিন্যান্ড ও ক্রুর ইসাবেলার কুটচাল বুঝতে না পেরে অস্ত্র পরিত্যাগ করে মসজিদে ও জাহাজে গিয়ে আশ্রয় নেয়। তখন ফার্ডিন্যান্ডের নির্দেশে তার বাহিনী সমস্ত মসজিদ তালাবদ্ধ করে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং জাহাজগুলোকে মাঝ সাগরে নিয়ে কোনটাতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং কোনটাকে ডুবিয়ে দেয়। ফলে সেদিন আগুনে পুড়ে ও সাগরে ডুবে সাত লক্ষ স্পেনিশ মুসলমান একসাথে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন লোমহর্ষক

হৃদয়বিদারক ট্রাজেডির কোন দ্বিতীয় নজীর নেই। যুদ্ধনীতিকে উপেক্ষা করে খৃস্টানরা ধোঁকা দিয়ে মুসলমানদেরকে বোকা বানিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন যখন মসজিদে মসজিদে তালাবদ্ধ হয়ে জীবন্ত দগ্ধ ও অতল সাগরে ডুবন্ত অবস্থায় ঈমানদীপ্ত প্রাণগুলো ছটফট করছিল এবং গ্রানাডার আকাশ-বাতাস তাদের আর্তচিৎকারে ভারি ও প্রকম্পিত হচ্ছিল, তখন মুসলমানদের অসহায়ত্ব দেখে বনের পশু-পাখিরা পর্যন্ত শোকবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। আর ঠিক সেই করুণ মুহূর্তে তাদের পরিণতি দেখে ফার্ডিন্যান্ড ও ইসাবেলা সহ নরপিচাশ খৃষ্টানরা অট্টহাসিতে লুটোপুটি খেয়েছিল। তখন আনন্দের আতিশয্যে পাষন্ড ফার্ডিন্যান্ড রানী ইসাবেলাকে জড়িয়ে ধরে বললো- "Oh muslim's! how fool you are!" “ওহে মুসলমান! তোরা এতো বোকা!”

আর সেখান থেকেই তারা উদ্ভব করলো এপ্রিল ফুল। অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা। তখন থেকেই প্রতিবছর খৃষ্টানরা মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর স্মারক হিসেবে এ দিবসটিকে এপ্রিল ফুল' নামে পালন করে আসছে।

অথচ দুঃখজনক যে, আত্মভোল মুসলিমজাতি তাদের অন্ধ অনুকরণ কে এদিনকে পালন করে মানুষকে বোকা বানানোর উৎসব করে। এটা কি আত্মোপহাস নয়? ছিঃ এ কেমন আত্মভোলা আমরা? হায়! আমাদের বোধোদয় কবে হবে?

শেষ কথা আজ আমাদের উচিত, ১লা এপ্রিলে এহেন এপ্রিল ফুলের কুসংস্কৃতি পরিত্যাগ করে এদিনকে স্পেনের মুসলমানদের প্রতি সমবেদনার দিনরূপে পালন করা। সেই সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদী ও খৃস্টানদের চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক হয়ে নিজেদের দ্বীন, ঈমান ও মাতৃভূমি যথাযথভাবে হিফাজতের প্রত্যয় গ্রহণ করা। এটাই ঈমান ও ইসলামের দাবী

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url