এনার্জি ড্রিংকস এর অপকারিতা ও এনার্জি ড্রিংক কি হালাল?

 

এনার্জি ড্রিংকস খেলে কি হয়?

ইদানীং তরুণ বয়সের ভোক্তাদের মধ্যে এনার্জি ড্রিংকের বেশ জনপ্রিয়তা দেখা যায়। চতুর বিপণন ও বিজ্ঞাপন এসবের মূলে কাজ করে। এতে পানীয় শিল্পে একটি দ্রুত প্রসারমাণ আইটেমে রূপ নিয়েছে এনার্জি ড্রিংক। ১৪০টি দেশে ২০০ ব্র্যান্ডের এনার্জি ড্রিংক তৈরি হচ্ছে এবং বিশ্বের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী তরুণদের ৩১ শতাংশ নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক গ্রহণ করে বলে জানা যায়। (সূত্র : সাইমন এম মেশার জে: অ্যালকোহল, এনার্জি ড্রিংকস অ্যান্ড ইয়ুথ: এ ডেঞ্জারাস মিক্স: ক্যালিফোর্নিয়া: মেন ইনস্টিটিউট ২০০৭)

অন্যান্য কোমল পানীয় ও স্পোর্টস ড্রিংকস থেকে এনার্জি ড্রিংকসের একটি তফাত হলো, এতে আছে উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন। ক্লান্তি দূর করার জন্য ও পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য এর বেশ দখল আছে বলে প্রচার করা হয়। (সূত্র: মিলার ই: জার্নাল এডল হেলথ: ২০০৮)।

বেশীর ভাগ এনার্জি ড্রিংকে প্রতি ২৫০ মিলিলিটার ক্যানে আছে ৮০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন, কোনো কোনো ড্রিংকে তা আছে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ।

ক্যাফেইন একটি আসক্তি তৈরি করার মতো উপাদান। এটি কেন্দ্রীয় ও প্রান্তিক স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে। এটা পরিমিত বা মাঝারি মাত্রার হলে, পারফরম্যান্স, ধৈর্য ও মনোযোগ বাড়াতে পারলেও তা বেশী মাত্রায় গ্রহণে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তা ঘটাতে পারে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, পেটের অসুখ ও হার্টের ছন্দে অনিয়ম। (সূত্র: নাওরাট পি ও অন্যান্য : ফুড এডিট কনটাম, ২০০৩)।

এনার্জি ড্রিংকে ভোক্তাদেরকে আকৃষ্ট ও তা পানে আসক্তি তৈরী করতে বেশী মাত্রায় ক্যাফেইন ব্যবহার করা হয়। যা একধরনের মাদকতা ও ফিলিংস তৈরীতে কাজ করে। অথচ বেশী মাত্রার ক্যাফেইন শারীরিক নানারকম মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। তাই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উৎকণ্ঠার জন্যই ডেনমার্ক ও ফ্রান্সে এনার্জি ড্রিংক সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিশুদের কাছে এ রকম পানীয় বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নরওয়ে ও আর্জেন্টিনায় এর বিক্রি সীমিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে স্টিমুল্যান্ট ড্রিংকস কমিটি এটা নিষিদ্ধের তৎপরতা চালাচ্ছে।

বিশেষ করে এ এনার্জি ড্রিংক পানীয়টি শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী নারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। গবেষকগণ দেখেছেন, যেসব শিশু ও তরুণ নিয়মিত এনার্জি ড্রিংক পান করে, তারা এতে আসক্ত হয়ে পড়ে। এরপর ক্রমে বেশী মাত্রায় তা গ্রহণ করা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং তখন তা স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি মাঝারি মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণও কোনো কোনো বয়সে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

ক্যাফেইন কাজ করে মগজের এমন এক অংশের ওপর, যা আসক্তির কেন্দ্র বলে বিবেচিত। তাই তা পানের দ্বারা ক্রমশ ভবিষ্যতে ক্যাফেইন পানীয়ের ওপর অনুরাগ জন্মায় যা তাকে মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। যেমন চিনিবহুল কোমল পানীয় দেহের স্থূলতা ও টাইপ২ ডায়াবেটিসের পথে নিয়ে যেতে পারে।

ক্যাফেইনের কোনো পুষ্টিগুণ নেই। তাই একে উৎসাহিত করারও কোনো কারণ নেই। উল্টো এনার্জি ড্রিংকের ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এবং পানীয়ের চিনি (প্রতি ক্যানে ৮-৯ চামচ চিনি) ডায়াবেটিস জন্ম দিতে পারে। আবার তা অন্ত্রে গুরুপাক সৃষ্টি করে হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। তেমনি তা ক্যান্সার সৃষ্টিতেও কাজ করে।

তাই বিভিন্ন দেশের অনেক বিদ্যালয়ে স্থানীয়ভাবে এনার্জি ড্রিংক সরবরাহ ও বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আবার তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক এনার্জি ড্রিংকে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট মেশানো থাকে। এটি এক ধরনের প্রিজারভেটিভ। বিএসটিআই কর্তৃক নির্ধারিত মান (বিডিএস) অনুযায়ী সোডিয়াম বেনজয়েট প্রতি লিটারে ১৬০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। এই মাত্রা অতিক্রম করলে তা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর পরিগণিত হয় যদ্দরুণ তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, এসব এনার্জি ড্রিংকসহ কয়েকটি কোমল পানীয়তে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম বেনজয়েট মেশানো হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর। পরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতি লিটার এসব এনার্জি ড্রিংকে সোডিয়াম বেনজয়েট থাকে ২১৩ মিলিগ্রাম। অথচ এ রকম উচ্চমাত্রার সোডিয়াম বেনজয়েট পরিপাকতন্ত্র নষ্ট করে দিতে পারে। যদ্দরুণ এতে হজমশক্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কিডনি অকেজো হওয়া, আলসার হওয়া বা গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে গর্ভপাত বা অটিস্টিক শিশু জন্মের আশংকা রয়েছে।

সুতরাং এ ধরনের এনার্জি ড্রিংক ও কোমল পানীয় থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে-এগুলো সাময়িক প্রশান্তিকর মনে হলেও এগুলো সংগোপনের আমাদের দেহকে কুড়ে কুড়ে খেয়ে যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url