ধর্মনিরপেক্ষ দাবী করা যাবে কী?

ধর্মনিরপেক্ষ


প্রশ্ন : সংবিধান অনুযায়ী এদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অথচ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এ অবস্থায় এ দেশের একজন মুসলমান কি নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবী বা প্রচার করতে পারবে?

উত্তর : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সময় ইসলামের ব্যাপারে তিনটি দল ছিলেন। একদল ছিলেন ধর্ম-বিপক্ষ, যেমন-আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা, শাইবা প্রমুখ।  তাদের সারাক্ষণ চিন্তা-চেতনা ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি করা এবং ইসলাম ধর্মকে ধ্বংস করা। তারা ছিল কাফির-বেদ্বীন। আরেক দল ছিল ধর্মপক্ষ। তারা হলেন সাহাবায়ে কিরাম (রা.)। তারা ধর্মের জন্য জীবনের সবকিছু কুরবান করে দিয়েছেন, ঘর-বাড়ী ছেড়েছেন, সমুদয় সম্পদ ব্যয় করেছেন। এমনকি তারা ইসলামের জন্য জীবনটুকুও উৎসর্গ করেছেন।

আরেক দল ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। তারা প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্তও ছিলো না, আবার কাফিরদের অন্তভুক্তও ছিলো না। তবে দুনিয়াবী স্বার্থ হাসিলের জন্য বাহ্যিকভাবে নিজেদেরকে মুসলমান বলে জাহির করতো, কিন্তু অন্তরে তারা ইসলামের প্রতি অনুগত ছিলো না। এ জন্য তারা তলে তলে কাফিরদের সাথে মিশে ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। তারা হলো মুনাফিক সম্প্রদায়।

তাই প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য হলো, সাহাবায়ে কিরামের (রা.) অনুসরণে নিজেকে ভিতরে-বাহিরে সবদিক দিয়ে ধর্মপক্ষ ও মুসলমান বলে প্রমাণ করা, দাবী করা ও প্রচার করা। কোন মুসলমান কস্মিনকালেও নিজেকে ধর্ম বিপক্ষ বা ধর্মনিরপেক্ষ বলে নিজেকে প্রচার করতে বা মেনে নিতে পারে না।

বস্তুত মুসলমানের সকল কাজ-কর্ম ও জীবন-মরণতো একমাত্র ইসলাম ধর্মের জন্যই। তাই যে দেশের অধিকাংশ জনগণ মুসলমান, সে দেশের সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা স্থান পেতে পারে না। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) যুদ্ধ করে দেশ জয় করেছিলেন নির্বিঘ্নে ইসলামধর্ম পালন করার জন্যই। তেমনি ভারতবিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিলো মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমিতে নির্বিঘ্নে দ্বীন পালনের জন্য। তারপর তৎকালীন পাকিস্তানের পশ্চিমারা এ পূর্বপ্রান্তের বাঙ্গালী মুসলমানদের ওপর জুলুম- নির্যাতনের খড়গ চালানোর কারণে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের কবল থেকে মুক্ত ও স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ অর্জন করেছি। কিন্তু ভারত থেকে ধর্মের ভিত্তিতে আমাদের ভাগ

হওয়ার পূর্বোক্ত বিষয়টি অনস্বীকার্য। তাই মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনভাবে এখানে আমাদের ধর্ম-কর্ম পালন করার মধ্যেই সেই ঐতিহাসিক ভারতবিভক্তির সার্থকতা নিহিত।

[হাওয়ালা : সূরাহ আলে ইমরান, ১৯/ সূরাহ আনফাল, ৩৯/ সূরাহ তাওবাহ, ৩৩/ সূরাহ যুমার, ১৪, ৬৫/ তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন, ২:৩৭]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url