বাংলাদেশ কি খ্রিস্টান রাষ্ট্রের সূচনা হতে যাচ্ছে?
দুটি খবরের ডান পাশেরটির সারমর্ম হলো - রাশিয়ার একজন মুখপাত্র বাংলাদেশকে সতর্ক করেছিলেন যে, আমেরিকা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে আরব বসন্ত ঘটাবে (সাল ডিসেম্বর ২০২৩)। অন্য খবরটি চীনের সাউথ চায়না মোর্নিং নিউজপেপারের, যারা ভারতীয় মিড়িয়ার সূত্র ধরে বলেছে - সাউথ এশিয়ার যেকোন একটি দেশে সরকার পরিবর্তন হতে পারে (সাল জুন ২০২৪) । অর্থাৎ, ভারত, রাশিয়া, চীন জানতো বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো কিছু একটা ঘটবে।
২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ডক্টর আব্দুল মোমেনকেও (সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী) সংবাদ মাধ্যম জিজ্ঞেস করেছিলেন - CIA বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করছে, আরব বসন্তের পসিবিলিটি আছে, এটি কতটুকু সত্য? অবশ্য ডক্টর আব্দুল মোমেনও সেই প্রশ্নে খুব একটা বেশি গুরুত্ব দেয়নি। ব্যাপারটা নিয়ে সবাই বেশ মজাও করেছিল তখন। অবশ্য নির্বাচনের পরেই শেখ হাসিনা তাঁকে আর সেই পদে রাখেননি।
ডকুমেন্টস
https://www.google.com/amp/s/en.prothomalo.com/amp/story/bangladesh/8jsc9elyiv
এবার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলান। রাশিয়ার মুখপাত্র ও ভারতীয় মিড়িয়ার সূত্রে চীনের সংবাদপত্রের প্রেডিকশন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়েছে।
আরো কিছু তথ্য দেই! সদ্য পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা প্রায়শই বলেছেন - তাঁকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জন্য আমেরিকা থেকে চাপ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি। এছাড়াও, শেখ হাসিনা আরো একটি অভিযোগ প্রায়শই করেছিলেন যে, তাঁকে এক ‘হোয়াইট ম্যান’ পার্বত্য চট্টগ্রামের একাংশ, ভারতের পূর্বাঞ্চলের একাংশ এবং বার্মার একাংশ নিয়ে পূর্ব তিমুরের মতো একটি খৃষ্টান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিনিময়ে শেখ হাসিনাকে স্বপদে/নিরাপদে গদিতে রাখার প্রস্তাব দেন।
আমি ধরেই নিলাম শেখ হাসিনা রাজনৈতিক কারণেই এটি বলেছে। ওকে, এবার আসি মূল বিষয়ে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়েকরা কেউই রাজনৈতিক দলের বাহিরে নয়৷ কি চমকে উঠলেন? জ্বী, তাদের অনেকেই একটি ছাত্র সংগঠনের নেতা। সংগঠনটির নাম- গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি। গতবছরের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছাত্র সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেকেই যার সদস্য সচিব। আর কেউ নয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোঃ নাহিদ ইসলামও এই সংগঠনের সদস্য সচিব। আজকে যিনি ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
ডকুমেন্টস
https://www.deshrupantor.com/amp/457743/the-debut-of-a-new-independent-student-body-called
এবার আরো একটি তথ্য দেই। ২০০৭ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দলটির নাম 'নাগরিক শক্তি'। এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জনাব ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূস।
ডকুমেন্টস
https://www.google.com/amp/s/www.bbc.com/bengali/news-62240242.amp
কাকতালীয় আরেকটা তথ্য দেই। বিগত ২৯শে জুলাই সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজিনা বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের সম্ভবনার কথা বলেন। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট করে দলটির নাম বলেননি।
ডকুমেন্টস
https://youtu.be/cll7eCAF_sE?si=aFdMHb1FU6MY_U5S
এবার দুইয়ে দুইয়ে চার মেলান। লক্ষ্য করলেই একটা বিষয় দেখবেন - বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কেবল আওয়ামীলীগকেই নয়, বিএনপি জামাত, জাতীয় পার্টিকেও কৌশলে এড়িয়ে চলছে। এমনকি, ইন্টেরিম সরকারেও নিজেদের মধ্যে থেকে দুজনকে সংযুক্ত করেছে।
মূল কথা - বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হবে, এই প্লটটি আমেরিকান দূতাবাস আগেই জানতো। সঙ্গে চীন, ভারতীয় মিড়িয়াও জানতো, নিসন্দেহে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা এই খবরটি জানতো, তা না-হলে ভারতীয় মিড়িয়া ব্যাপারটা এতো স্বচ্ছতার সঙ্গেই বলতে পারতো না।
এবার একটু ভিন্ন দিকে আসুন। শেখ হাসিনা প্রায়শই বলতো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় মার্কিনীদের নজর পড়েছে। আমি ধরেই নিলাম এটি মিথ্যা। কিন্তু, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরেই ভারতীয় মিড়িয়ায় দেওয়া জনাব ড. মোহাম্মদ ইউনুসের মন্তব্যটি খেয়াল করেছেন? তিনি স্পষ্টই অনেকটা থ্রেট দিয়ে বলেছেন - বাংলাদেশ অশান্ত হলে সেভেন সিস্টার্সও কিন্তু অক্ষত থাকবে না৷ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই ভদ্রলোকের এই মন্তব্য ঠিক কেনো বা কোনদিক ফোকাস করে?
ডকুমেন্টস
https://www.youtube.com/live/RKOxj0feBRc?si=AlzagUuiQyPOmc7m
অনেকে হয়তো বলবেন - আমেরিকা শেখ হাসিনাকে পরিবর্তন করলো ঠিক, তাহলে সেখানে জনাব ইউনুস কিভাবে যুক্ত আছে? জ্বী, জনাব ইউনুস ও আমেরিকার রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হিলারীকে ডক্টর ইউনুস ১লক্ষ ডলার থেকে ২.৫ লক্ষ ডলার তহবিল দিয়েছিল। সম্পর্কটা এবার যাচাই করে নিন। অবশ্য তখন ধারণা করা হয়েছিল - ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করা হবে। তবে সেটি হয়নি।
ডকুমেন্টস
https://www.google.com/amp/s/www.bbc.com/bengali/news/2016/08/160824_clinton_foundation_muhammad_yunus_donation.amp
চলতি বছরের এই নভেম্বরেই আমেরিকার প্রসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের ঠিক আগেই বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলো। এদিকে ২০০৭ সালে ডক্টর ইউনুসকে তত্বাবধানক সরকারে থাকার অনুরোধ করলেও তিনি রাজী হননি। তবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন, এবং তখন ভারত সফরেও তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জীর সাথে বৈঠক করেন, রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করেন। দিল্লিতে এক সেমিনারে রাজনীতির সদিচ্ছার কথাও জানান। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে দলটি আর এগোয়নি। হঠাৎ করে এত বছর পর ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস সাহেবের রাজনীতিতে জড়ানো কেমন যেনো ভুতুড়ে মনে হচ্ছে।
ডকুমেন্টস
https://www.google.com/amp/s/www.bbc.com/bengali/news-62240242.amp
তারউপর - ইউএসএ, ইউকে এই দেশগুলো পৃথিবীর সকল চোর বাটপারদের আশ্রয়স্থল হলেও, বিশেষ কোন এক অজানা কারণে শেখ হাসিনাকে এলাইলাম দিচ্ছে না৷ শেখ হাসিনার সঙ্গে আমেরিকার ঠিক দ্বন্দ্ব, বিরোধ কোথায়?
লক্ষ্য করলেই হয়তো মনে পড়বে - শেখ হাসিনা প্রায়ই আমেরিকাকে কটাক্ষ করে কথাবার্তা বলতেন, এরমধ্যে কিছু ছিল এরকম - ‘আমেরিকার ভিসা না দিলে কি হবে? ঐদিকে যাবো না, আরো অনেক দেশ আছে’। এছাড়াও পদ্মাসেতু, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আমেরিকাকে প্রায়ই শেখ হাসিনা কটাক্ষ সুরে কথা বলেছেন। তবে শেখ হাসিনাকে আমেরিকা অপছন্দ করার কারণ কি এটিই?
অন্যদিকে, জানুয়ারিতে ডক্টর ইউনুসের কন্যা মনিকা ইউনুসকে বৃটিশ সংবাদমাধ্যম 4News থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানিয়েছিলেন - বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং তা রাজনৈতিক দলগুলো বর্জন করেছে। ড. ইউনুসের সাজা সম্পর্কে বলেন - এটি অন্যায়ভাবে করা হয়েছে এবং তাঁর পিতাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
ডকুমেন্টস
https://youtu.be/70TCC6h72YQ?si=f1G3dlAhEEF23Ils
৬ মাস পূর্বেই ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে ডয়েচেভেলে থেকে জনাব খালেদ মহিউদ্দিন শেখ হাসিনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন - শেখ হাসিনা ডক্টর ইউনুসকে একেবারেই পছন্দ করেন না। বরং ডক্টর ইউনুসকে শেখ হাসিনা সুদখোর, চোর ছাড়াও সম্মোধন করেন না৷ এছাড়া তিনি দাবী করেন - তাঁকে ২০০৭ সালে ১০ বছরের জন্য তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হবার খবরটি মিথ্যা ছিল। অবশ্য এমনও গুঞ্জন আছে যে, ডক্টর ইউনুস বলেছিলেন - ‘আমি চাইলে শেখ হাসিনা একদিনও ক্ষমতায় টিকতে পারতেন না’। তয় এই খবরের সত্যতা পাইনি। মজার বিষয়, ৭ মাস পূর্বে ডক্টর ইউনুসকে শেখ হাসিনা সরকার ৬ মাসের জেল এবং জরিমানা করে, এবং ঠিক ৭ মাস না যেতেই শেখ হাসিনার পতন হয়৷
১। ডয়েচেভেলেতে দেওয়া ডক্টর ইউনুসের সাক্ষাৎকারঃ
ডকুমেন্টস
https://www.youtube.com/live/ZrVwJ2iAgNs?si=1wgRn48yByZ1q-ij
২। ৭ মাস পূর্বে ডক্টর ইউনুসকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়ঃ
ডকুমেন্টস
https://youtu.be/EFy0BZ-h3D0?si=O8C4dBmNKAXG1M6X
এইদিকে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন এবং ডক্টর ইউনুসের ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবার খবরে আমেরিকা সবার আগেই ডক্টর ইউনুসের এই সরকারকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
ডকুমেন্টস
https://youtu.be/Z5KXdeTmjG4?si=76XorV_btS6-wl3y
এটা সত্যি যে - ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে শেখ হাসিনা সরকারের অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। অনেকগুলো প্রাণ ঝরেছে। কিন্তু, এবারের মতো এতবড় আন্দোলন এরআগে শেখ হাসিনা সরকার দেখেনি। তা-ও যেখানে আন্দোলনকারীরা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে আসেনি।
যাইহোক৷ আমার কয়েকটা বিষয়ে খুব কিউরিওসিটি কাজ করছে। বিশেষ করে -
১৷ হঠাৎ ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের রাজনীতিতে জড়ানোর উদ্দেশ্য কি?
২। আমেরিকা কি ডক্টর ইউনুসের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ঘাঁটি করতে চায়?বাংলাদেশ ভেঙে পূর্ব তিমুরের মতো নতুন খৃষ্টান রাষ্ট্রের সূচনা হতে যাচ্ছে? তা নাহলে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে তাঁর মন্তব্যের উদ্দেশ্য কি?
৩। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নতুন রাজনৈতিক দল ছিল। তাহলে তাদের উদ্দেশ্য কি? এটিই কি ডক্টর ইউনুসের নতুন দল, বা সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ভবিষ্যদ্বাণী কি এটিকে ঘিরেই?
৪। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দলের নাম প্রায়ই কাছাকাছি। এর পেছনের রহস্য কি?
৫। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে স্বল্প সময়ের জন্য নয়, বরং দীর্ঘ সময় এই পদে রাখতে আগ্রহী। তাহলে সেটি কতদিন দীর্ঘ হতে পারে? এবং তাতে তাদের উদ্দেশ্য কি?
৬। মোটামুটি ধরাই যাচ্ছে - ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বিএনপি জামাত, আওয়ামীলীগের পক্ষ হয়ে কাজ করতে আসেননি। কেননা, আন্দোলনের সমন্বয়কেরা ইতিমধ্যেই বলেছেন - তারা পুরাতন কাউকেই চান না।
যাইহোক। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস নিসন্দেহে একজন গ্লোবাল সিটিজেন। আমার দৃঢ় প্রত্যাশা, আমার এসব কিউরিওসিটি সত্য হবে না৷ যদি সত্য হয় - তাহলে এই অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যের মতো একটি অস্থিতিশীল এলাকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
- ড. মোহাম্মদ ইউনুসের হঠাৎ রাজনীতিতে জড়ানো এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলের সমন্বয়কদের রাজনৈতিক দল থাকা সন্দেহজনক। এর পেছন কে ছিল? তাদের স্বার্থ কি?