শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

 

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস

শবে বরাত (লাইলাতুল বরাত) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় রাত, যা ১৪ শাবান দিবাগত রাতে সংঘটিত হয়। এ সম্পর্কে বেশ কিছু হাদিস পাওয়া যায়, যেগুলোতে এ রাতের ফজিলত ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।


১. আল্লাহ তাআলা এ রাতে বান্দাদের ক্ষমা করেন

হাদিস:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

“শাবানের মধ্যরাতে (১৪ শাবান রাতে) আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, ‘আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিজিক চায়? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে মুক্তি দেব।’”

(ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, তাবরানি: ১০২৪৪)


ব্যাখ্যা: এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, শবে বরাত গুনাহ মাফের একটি বিশেষ রাত, যেখানে আল্লাহ বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের প্রয়োজন পূরণ করেন।


২. অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়

 হাদিস:

 রাসুল (সা.) বলেন, "শাবানের মধ্য রাতে আল্লাহ তাআলা বনী কালব গোত্রের পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দেন।"

(তিরমিজি: ৭৩৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৮০)


ব্যাখ্যা: বনী কালব ছিল এমন এক গোত্র, যাদের পশুর সংখ্যা ছিল অসংখ্য। অর্থাৎ, এই হাদিস বোঝায় যে, এ রাতে বিপুল সংখ্যক বান্দা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করেন।


৩. শবে বরাতে তাকদির নির্ধারণ করা হয়

হাদিস:

হযরত ইকরিমা (রা.) বলেন, “শবে বরাতে এক বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করা হয়— কে মারা যাবে, কার রিজিক কতটুকু হবে, কার কী অবস্থা হবে— সবকিছু নির্ধারণ করা হয়।”

(দারিমি: ২/৩৭৪)


ব্যাখ্যা: অর্থাৎ, এই রাতে আল্লাহ বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন এবং তা লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ হয়।


৪. রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতে

হাদিস:

আয়েশা (রা.) বলেন,

"আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি, যতটা শাবান মাসে দেখেছি।"

(বুখারি: ১৯৭০, মুসলিম: ১১৫৬)


ব্যাখ্যা: এটি প্রমাণ করে যে, রাসুল (সা.) শবে বরাতসহ পুরো শাবান মাসকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন এবং এ সময় বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন।


৫. রাসুল (সা.) কবরস্থান পরিদর্শন ও মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন

হাদিস:

আয়েশা (রা.) বলেন,

"এক রাতে আমি দেখলাম, নবী (সা.) ঘরে নেই। আমি তাঁকে খুঁজতে গিয়ে পেলাম জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে। তিনি বললেন, ‘হে আয়েশা! আল্লাহ তাআলা শাবানের মধ্যরাতে দুনিয়ার আসমানে রহমতের দরজা খুলে দেন এবং বনী কালব গোত্রের পশমের পরিমাণ লোকদের ক্ষমা করে দেন।’”

(মুসনাদ আহমাদ: ২৬০২২, ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)


ব্যাখ্যা: রাসুল (সা.) এই রাতে কবরস্থানে গিয়েছেন এবং মৃতদের জন্য দোয়া করেছেন, যা প্রমাণ করে যে, এ রাতে মৃত আত্মীয়দের জন্য মাগফিরাত কামনা করা উত্তম আমল।


📌 সংক্ষেপে:

  • শবে বরাতে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন।
  • এই রাতে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
  • বান্দাদের ভাগ্য (রিজিক, মৃত্যু, হায়াত) নির্ধারিত হয়।
  • রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন এবং এ রাতে দোয়া করতেন।
  • মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করা উত্তম আমল।


🔹 আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের বরকত ও ক্ষমা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন! 🤲

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url