শবে বরাতের ইতিহাস

 

শবে বরাতের ইতিহাস

শবে বরাতের ইতিহাস ও গুরুত্ব

শবে বরাত (لَيْلَةُ ٱلْبَرَاءَةِ) আরবি শব্দ, যার অর্থ "মুক্তির রাত" বা "গুনাহ মাফের রাত"। এটি ১৪ শাবান দিবাগত রাতে পালিত হয় এবং ইসলামী ঐতিহ্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।


শবে বরাতের ইতিহাস ও উৎপত্তি

১. শবে বরাতের শাব্দিক অর্থ ও পরিচয়

  • "শবে বরাত" শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে "শব" মানে রাত এবং "বরাত" মানে মুক্তি বা ক্ষমা।
  • আরবিতে এটিকে "লাইলাতুল বরাআত" বলা হয়, যার অর্থ "মুক্তির রাত"।


২. শবে বরাত সম্পর্কে কোরআনে ইঙ্গিত

কোরআনের সূরা আদ-দুখান (৪৪:৩-৪)-এ বলা হয়েছে—

"নিশ্চয়ই আমি এক বরকতময় রাতে এটি নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।"


মুফাসসিরদের একাংশের মতে, এখানে বলা "বরকতময় রাত" দ্বারা শবে বরাত বোঝানো হয়েছে, যেখানে বান্দাদের তাকদির নির্ধারণ করা হয়। তবে অন্য অনেক মুফাসসির এটি লাইলাতুল কদর বলেও ব্যাখ্যা করেছেন।


৩. হাদিসে শবে বরাতের উল্লেখ

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

“শাবানের মধ্যরাতে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং বান্দাদের ডাকতে থাকেন— ‘কেউ কি ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। কেউ কি রিজিক চাইবে? আমি তাকে রিজিক দেব। কেউ কি বিপদে পড়েছে? আমি তাকে উদ্ধার করব।’”

(ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, তিরমিজি: ৭৩৯)


আরও একটি হাদিসে এসেছে—

“আল্লাহ এই রাতে বনী কালব গোত্রের পশমের সংখ্যা পরিমাণ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।”

(তিরমিজি: ৭৩৯, ইবনে মাজাহ: ১৩৮০)


এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, শবে বরাত বিশেষ এক রাত, যেখানে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত বর্ষিত হয়।


৪. রাসুল (সা.)-এর আমল ও সাহাবাদের অবস্থান

  • হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন এবং শবে বরাতে তিনি ইবাদতে মশগুল থাকতেন।

আয়েশা (রা.) বলেন—

“আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খুঁজতে গিয়ে জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে পেলাম। তিনি সেখানে মৃতদের জন্য দোয়া করছিলেন।”

(ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯, মুসনাদ আহমাদ: ২৬০২২)


এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, শবে বরাতে কবর জিয়ারত করা এবং মৃতদের জন্য দোয়া করা একটি উত্তম আমল।


  • ইসলামের ইতিহাসে শবে বরাতের পালন
  • ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই শবে বরাতকে বিশেষ ফজিলতের রাত হিসেবে গণ্য করা হয়।
  • সাহাবারা ও তাবেয়ীরা এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করতেন।
  • তবে, এটি উৎসব হিসেবে পালনের প্রচলন পরবর্তীকালে ভারতীয় উপমহাদেশ ও পারস্যে বেশি বিস্তার লাভ করে।


শবে বরাতের গুরুত্ব ও আমল

  • নফল নামাজ (২, ৪, ৬, ৮, ১২ রাকাত) পড়া।
  • কোরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করা।
  • গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া ও ইস্তিগফার করা।
  • কবর জিয়ারত ও মৃতদের জন্য দোয়া করা।
  • ১৫ শাবান নফল রোজা রাখা।


কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত

❌ শবে বরাতে আলোকসজ্জা ও আতশবাজি করা ইসলামে নেই।

❌ বিশেষ ১০০ রাকাত নামাজের বিধান নেই।

❌ শবে বরাতে বিশেষ মিষ্টান্ন তৈরি ও বিতরণ করা বাধ্যতামূলক নয়।


সংক্ষেপে:

  • শবে বরাত মুক্তি, গুনাহ মাফ ও তাকদির নির্ধারণের রাত।
  • এ রাতের ফজিলত সম্পর্কে কয়েকটি সহিহ হাদিস পাওয়া যায়।
  • রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন এবং এ রাতে কবর জিয়ারত করতেন।
  • এ রাতকে ইবাদতের মাধ্যমে কাটানো উত্তম।


🔹 আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন! 🤲

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url