শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব

 

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব

শবে বরাতের ফজিলত ও গুরুত্ব

শবে বরাত কী?

শবে বরাত আরবি শব্দ "লাইলাতুল বরাত" থেকে এসেছে, যার অর্থ "মুক্তির রাত" বা "গুনাহ মাফের রাত"। এটি ১৪ শাবান দিবাগত রাতে পালিত হয়। ইসলামে এ রাতকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


শবে বরাতের ফজিলত (গুরুত্বপূর্ণ হাদিস ও কোরআনের আলোকে)

১. আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও গুনাহ মাফের রাত

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

“শাবানের মধ্যরাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা দেন— ‘আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিজিক চায়? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে মুক্তি দেব।’” (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)


২. বান্দার তাকদির নির্ধারণের রাত

কোরআনে বলা হয়েছে—

“আমি এক বরকতময় রাতে এটি নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা করা হয়।” (সূরা আদ-দুখান: ৩-৪)


ব্যাখ্যা: মুফাসসিরদের মতে, শবে বরাতে মানুষের জীবন-মৃত্যু, রিজিক, সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য নির্ধারণ করা হয়।


৩. রাসুল (সা.) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন

আয়েশা (রা.) বলেছেন,

"আমি রাসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত বেশি রোজা রাখতে দেখিনি, যতটা শাবান মাসে দেখেছি।" (বুখারি: ১৯৭০)


ব্যাখ্যা: এটি প্রমাণ করে, শবে বরাতসহ পুরো শাবান মাসে নফল রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।


শবে বরাতের গুরুত্ব

  • এ রাতে বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়।
  • আল্লাহ অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।
  • এ রাতে দোয়া কবুলের বিশেষ সুযোগ রয়েছে।
  • নফল ইবাদত, রোজা ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।


শবে বরাতে করণীয় আমল

  • নফল নামাজ আদায় করা (২, ৪, ৮ বা ১২ রাকাত)।
  • কোরআন তিলাওয়াত করা।
  • দোয়া ও ইস্তিগফার করা (বিশেষত ‘اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عني’ পড়া)।
  • ১৫ শাবান রোজা রাখা (সুন্নত অনুযায়ী)।
  • মৃতদের জন্য দোয়া করা ও কবর জিয়ারত করা।


⚠️ কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত

❌ শবে বরাতে আতশবাজি, আলোকসজ্জা বা বিশেষ উৎসব পালন করা বিদআত।

❌ ১০০ রাকাত বা ১৪ রাকাত বিশেষ কোনো নামাজের নির্দিষ্ট বিধান নেই।

❌ শুধু এই রাতে বিশেষ খাবার রান্না করা বাধ্যতামূলক নয়।


📌 সংক্ষেপে:

🔹 শবে বরাত হলো গুনাহ মাফ, রহমত ও তাকদির নির্ধারণের রাত।

🔹 এ রাতে ইবাদত, দোয়া ও কোরআন তিলাওয়াত করা উত্তম।

🔹 ১৫ শাবান রোজা রাখা সুন্নত।

🔹 বিদআত ও অতিরঞ্জিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

🔹 আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন! 🤲

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url