শবে বরাতের ফজিলত ও আমল

 

শবে বরাতের ফজিলত ও আমল

শবে বরাতের ফজিলত ও করণীয় আমল

শবে বরাত (লাইলাতুল বরাত) ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা ১৪ শা'বান দিবাগত রাতে পালিত হয়। এটি "মাগফিরাতের রাত" বা "নাজাতের রাত" হিসেবে পরিচিত। এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন, দোয়া কবুল করেন এবং রিজিক নির্ধারণ করেন।


শবে বরাতের ফজিলত

১. আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ক্ষমা করেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

📜 "আল্লাহ তাআলা মধ্য শাবানের রাতে তাঁর রহমতের দরজা খুলে দেন এবং বনী কালব গোত্রের পশমের সংখ্যা পরিমাণ লোকদের ক্ষমা করেন।" (তিরমিজি: ৭৩৯)


২. ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার রাত

বর্ণিত আছে যে, এই রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়, যেমন—

📖 "এই রাতে বান্দাদের আমলনামা উত্থাপন করা হয় এবং মানুষের জীবিকা, হায়াত ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ করা হয়।" (দারুল কুতনি)


৩. দোয়া কবুল হওয়ার রাত

📜 "এই রাতে আল্লাহ বলেন, 'আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেউ রিজিক চায়? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কেউ বিপদে? আমি তাকে মুক্তি দেব।'" (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)


শবে বরাতের করণীয় আমল

১. নফল নামাজ আদায়

  • ২, ৪, ৬ বা ৮ রাকাত নফল নামাজ পড়া যেতে পারে।
  • কোরআনের ছোট সূরা বা দীর্ঘ সূরা তিলাওয়াত করা উত্তম।
  • বিশেষ করে, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়লে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যাবে।


২. কুরআন তিলাওয়াত

  • এ রাতে বেশি বেশি কুরআন পড়া উত্তম।
  • সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস, ইয়াসিন তিলাওয়াত করা যেতে পারে।


৩. দোয়া ও ইস্তিগফার করা

  • এ রাতে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করা উত্তম।
  • দোয়ার মধ্যে এই দোয়া পড়া যেতে পারে—

📖 اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عني

(হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, দয়া পরায়ণ। আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করুন।)


৪. রোজা রাখা (১৫ শা'বান)

  • রাসুল (সা.) ১৫ শা'বানের রোজার প্রতি উৎসাহ দিতেন।
  • এটি নফল রোজা, তবে রাখা হলে অনেক সওয়াব পাওয়া যাবে।


৫. কবরে যাওয়া ও মাগফিরাতের দোয়া করা

  • রাসুল (সা.) শবে বরাতের রাতে জন্নতুল বাকী কবরস্থানে গিয়েছিলেন এবং মৃতদের জন্য দোয়া করেছিলেন।
  • আমরা আমাদের মৃত আত্মীয়দের জন্য দোয়া করতে পারি।


⚠️ কিছু ভুল ধারণা ও বিদআত থেকে বাঁচার উপায়

❌ শবে বরাতে বিশেষ মিষ্টান্ন বিতরণ করা বাধ্যতামূলক নয়।

❌ এই রাতে বিশেষ ১০০ রাকাত নামাজের কোনো ভিত্তি নেই।

❌ আতশবাজি, আলোকসজ্জা, আনন্দোৎসব করা শরিয়তসম্মত নয়।


📌 সংক্ষেপে:

✅ শবে বরাত ক্ষমা, রহমত ও নাজাতের রাত।

✅ বেশি বেশি ইবাদত, নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত ও দোয়া করা উত্তম।

✅ ১৫ শা'বানের রোজা রাখা সুন্নত।

✅ বিদআত ও অতিরঞ্জিত কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।


🔹 আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবে বরাতের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন! 🤲

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url